শিরোনাম

10/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি উপাদান!Food and nutrients necessary for the proper growth of the child!

 শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি উপাদান!Food and nutrients are necessary for the proper growth of the child!



একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন বাবা-মা এবং পুরো পরিবারে অনেক স্বপ্ন এবং চিন্তা আসে। কী খাবারে শিশু সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে! সবাই চিন্তা করে কী খাবেন আর কতটা খাবেন। অনেক সময় সঠিক জ্ঞানের অভাবে শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে বাচ্চাদের ঠিকমতো বেড়ে ওঠা হয় না।


জন্মের পর ছয় মাস মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাবার। শিশুর জন্মের সময় মায়ের স্তন থেকে যে হলুদ আঠালো ও স্বচ্ছ দুধ নিঃসৃত হয় তাকে কোলোস্ট্রাম বলে। এতে রয়েছে ইমিউন উপাদান যা শিশুকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। নীচে শিশুদের পুষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করা হল:


অনেকেই ভাবেন কতদিন পর পর কতটা দুধ খাওয়াতে হবে?

একটি শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। জন্ম থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিদিন শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে 120 কিলোক্যালরি এবং সাত থেকে 12 মাস পর্যন্ত প্রতি কিলোগ্রাম শরীরের ওজনের জন্য 100 কিলোক্যালরি প্রয়োজন। শরীরের ওজন বাড়ার সাথে সাথে মোট ক্যালরির চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যদিও শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে ক্যালরির চাহিদা কমে যায়।


জন্মের সময়, শিশুর খাদ্যের প্রয়োজন হয় 350 থেকে 500 কিলোক্যালরি। এক বছর বয়সে 800 থেকে 1200 কিলোক্যালরি। ছয় মাস বয়সের পর অন্য খাবারের সঙ্গে বুকের দুধ না দিলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর কারণ দুধের চাহিদা পূরণ হয় না। সে সময় দুধে শিশুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়া। যেমন দুধে ভিটামিন সি এবং আয়রন এতই কম যে তা শিশুর চাহিদা পূরণ করে না। আর জন্মের সময় গর্ভ থেকে শিশু তার শরীরে যে পরিমাণ আয়রন সঞ্চয় করে তা ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত তার চাহিদা মেটাতে পারে। এ সময় এই দুটি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হলে শিশুর রক্তশূন্যতার আশঙ্কা থাকে। এ সময় ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি-এর চাহিদা বেশি থাকে, যা শুধু দুধ দিয়ে মেটানো যায় না। ভিটামিন সি এর জন্য ফলের রস, আয়রনের জন্য ডিমের কুসুম এবং ভিটামিন এ এবং ডি এর জন্য কড লিভার অয়েল ভালো। এটি না থাকলে গাঢ় সবুজ শাকসবজি এবং গাজর সিদ্ধ করে ছাই ছাড়া খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুকে সকালের রোদে কিছুক্ষণ রাখলে শিশুর ত্বকের নিচে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা শিশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম।


বাংলাদেশে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর ওজন জন্মের সময় ৩-৩.৫ কিলোগ্রাম হয়। পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে পূরণ করা হলে, এর ওজন পাঁচ মাসে প্রায় দ্বিগুণ এবং এক বছরে তিনগুণ হয়ে যায়।

এই প্রবণতা ঠিক রাখতে ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে প্রতিদিন সুষম খাবার দিতে হবে।

চাল, ডাল ও সবজি সিদ্ধ করে এক সাথে মিশিয়ে ২/১ চামচ নরম খাবার খাওয়ান। অনেকেই মনে করেন ভাত শিশুদের জন্য ভালো নয়। কিন্তু ভাত হজম করা খুবই সহজ এবং শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি ডাল ও নরম সেদ্ধ সবজি যেমন পেঁপে, গাজর, আলু বা তেলবিহীন মাছ অল্প অল্প করে খেতে হবে।


অপরিণত শিশুদের সঠিক শারীরিক গঠন থাকে না এবং তাদের ওজন কম হয়। এই শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাদের ক্যালরির চাহিদা কিছুটা বেশি তবে হজম শক্তি ততটা নয়। এমনকি এই সময়ে মায়ের দুধ সেরা হলেও বিশেষ ফর্মুলা খাবার চাহিদা মেটাতে পারে। অপরিণত শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন খাওয়ালে শিশুর ওজন দ্রুত বাড়বে।

এভাবে প্রতিটি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার প্রদান করলে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ঘটবে।

মনে রাখতে হবে এই বয়সেই শিশুর আসল সময়। এখন শিশুরা যদি সঠিক পুষ্টির সাথে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে তাহলে সেই শিশুরা বড় হয়েও সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকবে।


লেখক: পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড পল্লবী, ঢাকা।