মিষ্টির মিষ্টি গল্প, নাটোরের কাঁচাগোল্লা
[১] 'নাটোর কাঁচাগোল্লা' শুধু একটি মিষ্টির নামই নয়, ইতিহাসেরও নাম। প্রায় আড়াইশ বছর আগের নাটোরের কাঁচাগোল্লার সন্ধান পাওয়া যায় ইতিহাসে। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই মিষ্টি দাঁতের তৃপ্তি দিয়ে আসছে। 1757 সাল থেকে, এই মিষ্টি ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
[২] কাঁচাগোল্লার সৃষ্টির একটি চমৎকার গল্প আছে। জনশ্রুতি আছে যে এই মিষ্টিটি নিচে পড়ে তৈরি করা হয়েছিল। নাটোর শহরের লালবাজারে মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এই চুলায় দেড় থেকে দুই মণ ছোলা দিয়ে রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম, কালোজাম ইত্যাদি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে ১০-১৫ জন কর্মচারী কাজ করত।
[৩] হঠাৎ একদিন মিষ্টির দোকানের কারিগর এলেন না। মধুসূদনের মাথায় হাত! এখন এতগুলো ছানার কি হবে? এই চিন্তায় তিনি অস্থির। তিনি ছানাগুলোর গায়ে চিনির রস ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে বলেন, যাতে সেগুলো নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। এরপর মুখে দেখা যায় চিনি মেশানো ছোলা দারুণ স্বাদের। নতুন মিষ্টির নাম কি রাখব ভাবতে লাগলাম। যেহেতু ছোলাকে চিনির রসে ডুবানোর আগে কিছু করতে হয় না অর্থাৎ কাঁচা ছোলা চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় (রসগোল্লা ছোলা তেলে ভাজা হয় এবং চিনির রসে ডুবানো হয়), তাই এর নাম কাঁচা গোল্লা।
[৪] কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, পান্তোয়া, এমনকি উকরন সন্দেশকেও হার মানায়। এটি একটি মিষ্টি কাঁচা ছোলা স্বাদ আছে, অন্য কোন মিষ্টি ভিন্ন. ধীরে ধীরে মিষ্টি দাঁতের এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। এরপর থেকে নিয়মিত এই মিষ্টি তৈরি করে আসছেন মধুসূদন। কাঁচাগোল্লার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর। কাঁচা মাংসের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মধুসূদন খামারে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মণ মুরগির কাঁচা মাংস উৎপাদিত হয়। তখন কাঁচাগোল্লাকে জানাতে ঢোল বাজানো হতো।
[৫] ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বাংলার দানশীল শাসক রানী ভবানীর রাজত্বকালে কাঁচাগোল্লার খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন নাটোরে মিষ্টির দোকান খুব কম ছিল। এসব দোকানে বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা ছাড়াও উকরন সন্দেশ, রাঘবশাহী, চমচম, রাজভোগ, রসমালাই, পান্তোয়া ইত্যাদির মতো আরও অনেক মিষ্টি পাওয়া যেত, তবে সবগুলোর মধ্যে কাঁচাগোল্লাই উঠে আসে উপরে। ফলে এই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা তৎকালীন রাজা ও জমিদারদের মিষ্টিমুখ করতে ব্যবহৃত হতো। এমনকি বিলেটের রাজপরিবারও এই কাঁচা গোল্লা ব্যবহার করত। তিনি ভারতের সর্বত্র গিয়েছিলেন।
[৬] রাজশাহী গেজেটেও কাঁচাগোল্লার খ্যাতির উল্লেখ আছে। কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সে সময়ের কাঁচাগোল্লার খ্যাতি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কোলকাতা ও নাটোর শহর একই সময়ে স্থাপিত হওয়ায় এবং এই দুটি শহর সার্বক্ষণিক ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে থাকায় নাটোরের কাঁচা গুলির কথা সে সময় ভারত ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই আন্তর্জাতিকতা সবুজ আলো পায়।